ফরিদপুর: পদ্মা সেতুর পর নতুন সম্ভাবনার শহর

লেখক: স্টাফ রিপোর্টার | প্রতিধ্বনি
প্রকাশ: ২ সপ্তাহ আগে

পদ্মা সেতুর উদ্বোধনের পর ফরিদপুর জেলা দক্ষিণ-পশ্চিমবাংলায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ও দ্রুত সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় এটি পর্যটক ও ইতিহাসপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হয়েছে। আধুনিক জীবনযাত্রা, গ্রামীণ সরলতা এবং সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের এক চমৎকার মিশ্রণ এই ফরিদপুর।

ফরিদপুরকে শুধু প্রশাসনিক জেলা হিসেবে দেখা যথেষ্ট নয়। এখানকার জমিদার বাড়ি, প্রাচীন মসজিদ, কবি জসীমউদ্দীনের জন্মভূমি—সবকিছু মিলিয়ে এটি বাঙালির ইতিহাস ও সংস্কৃতির ধারক।

ঐতিহাসিক জমিদার বাড়ি

ময়েজ মঞ্জিল (কমলাপুর)
ফরিদপুর শহরের কমলাপুরে অবস্থিত ময়েজ মঞ্জিল প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত এই আবাসভবনে ইউরোপীয় ও স্থানীয় স্থাপত্যের অনন্য মিশ্রণ দেখা যায়। বৃহৎ আয়তনের ভবন, বহু কক্ষ, কারুকার্যপূর্ণ স্তম্ভ ও বারান্দা একসময়ের জমিদারজীবনের জৌলুসকে তুলে ধরে।

বাইশরশি জমিদার বাড়ি (সদরপুর)
৫০ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এই বাড়ি একসময়ের ২২টি পরগনার অধিপতির প্রতীক। বহু কক্ষ, মন্দির, নাটমন্দির এবং বিশাল পুকুর—সবই সেই সময়ের জৌলুসের সাক্ষ্য বহন করে। দুঃখজনকভাবে, বর্তমানে অবহেলা ও চুরির কারণে এটি ধ্বংসের পথে।

কানাইপুর জমিদার বাড়ি (শিকদার বাড়ি)
সদর উপজেলার কানাইপুরে অবস্থিত এই বাড়িতে স্থানীয় বাঙালি ও ঔপনিবেশিক স্থাপত্যের মিলন লক্ষ্য করা যায়। চুন-সুরকি ও ইটের গাঁথুনি, প্রশস্ত উঠান—সবই অতীতের সাক্ষী।

প্রাচীন মসজিদ ও ধর্মীয় ঐতিহ্য

পথরাইল মসজিদ ও সাতৈর মসজিদ
১৫–১৬ শতকের এই মসজিদগুলো মুসলিম স্থাপত্যের অনন্য নিদর্শন। পোড়ামাটির ফলক, ছোট ছোট গম্বুজ এবং খোদাই করা লিপি—সবই প্রত্নতাত্ত্বিক ও পর্যটন দৃষ্টিকোণ থেকে গুরুত্বপূর্ণ।

সাংস্কৃতিক কেন্দ্র: কবি জসীমউদ্দীনের বাড়ি (অম্বিকাপুর)

ফরিদপুর পল্লীকবি জসীমউদ্দীনের জন্মভূমি। তাঁর ব্যবহৃত জিনিসপত্র, পাণ্ডুলিপি এবং স্মৃতিচিহ্ন এখানে সংরক্ষিত। জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকীতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়, যা বাংলা সাহিত্যের অনুরাগীদের কাছে বিশেষ আকর্ষণীয়।

আধুনিক বিনোদন ও প্রশাসনিক স্থাপনা

শেখ রাসেল শিশুপার্ক
শিশুদের জন্য নিরাপদ বিনোদনের স্থান। রাইড, খেলার সরঞ্জাম এবং সবুজ মাঠ—পরিবারের জন্য আদর্শ মিলনস্থল।

আরও পড়ুন  একক ভিসায় ভ্রমণ করা যাবে জিসিসিভুক্ত ৬ দেশ

ঔপনিবেশিক জজকোর্ট ভবন
ব্রিটিশ আমলের স্থাপত্য বহনকারী এই ভবন এখনও সক্রিয়। উঁচু ছাদ, দীর্ঘ বারান্দা এবং স্থাপত্যের বিশালতা পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

ফরিদপুরের স্বাদ: তেঁতুলতলার মিষ্টি

কমলাপুরে তেঁতুলতলার মিষ্টি বিখ্যাত। ‘খোকা মিয়ার রসগোল্লা’ প্রায় ৭০ বছরের ঐতিহ্য বহন করে। এছাড়া পদ্মার হিলশা, রুই, কাতলা মাছ এবং স্থানীয় পিঠাও ভ্রমণকারীদের কাছে জনপ্রিয়।

ফরিদপুর জেলা ইতিহাস, সংস্কৃতি, খাদ্য ও আধুনিকতার অপূর্ব মিশ্রণ। পদ্মা সেতুর কারণে যোগাযোগ সহজ হওয়ায় পর্যটন ও অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে জমিদার বাড়ি ও প্রাচীন মসজিদগুলো সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ অপরিহার্য। ফরিদপুর কেবল ভ্রমণের স্থান নয়; এটি বাঙালির আত্মপরিচয় ও ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অংশ।