উত্তরের আকাশে ভেসে ওঠা রঙিন আলোর নৃত্য—সবুজ, বেগুনি, নীল ও গোলাপি ঝলক—এই বিস্ময়কর প্রাকৃতিক দৃশ্যকেই বলা হয় অরোরা বা Aurora Borealis। সূর্য থেকে নির্গত চার্জযুক্ত কণাগুলো যখন পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের সঙ্গে সংঘর্ষে আলোক বিকিরণ তৈরি করে, তখনই সৃষ্টি হয় এই অপূর্ব দৃশ্য।
বিশ্বজুড়ে পর্যটকরা প্রতিবছর এই অরোরা দেখার আশায় পাড়ি জমান উত্তর ইউরোপ ও কানাডার তুষারাবৃত অঞ্চলে। বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের জন্য এটি হতে পারে এক অনন্য প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতা—যা জীবনে একবার দেখার মতো।
অরোরা দেখা শুধুই একটি ভ্রমণ নয়, এটি প্রকৃতির এক অলৌকিক প্রদর্শনী। সঠিক সময়, জায়গা ও প্রস্তুতি থাকলে বাংলাদেশের ভ্রমণকারীরাও এই স্বপ্নময় দৃশ্যের সাক্ষী হতে পারেন। আর তাই, শীতের রাতে এক ঝলক অরোরার আলো দেখার স্বপ্ন এখন অনেকের জন্যই এক জীবনের লক্ষ্য হয়ে উঠছে।
অরোরা দেখার সবচেয়ে উপযুক্ত সময় সেপ্টেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত, যখন উত্তর মেরুর রাত দীর্ঘ ও আকাশ পরিষ্কার থাকে। সূর্যাস্তের পর রাত ৯টা থেকে ভোর ২টার মধ্যে এই আলো সবচেয়ে স্পষ্টভাবে দেখা যায়।
শীতকালীন মৌসুমে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, সুইডেন, কানাডা এবং আলাস্কা—এই ছয়টি দেশ অরোরা পর্যবেক্ষণের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় গন্তব্য হিসেবে পরিচিত।
বাংলাদেশ থেকে অরোরা দেখার জন্য সরাসরি কোনো গন্তব্যে ফ্লাইট নেই, তবে ট্রানজিটসহ যাওয়া যায় বিভিন্ন রুটে—ঢাকা থেকে ইস্তাম্বুল, দোহা বা দুবাই হয়ে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড বা আইসল্যান্ডে।
বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য এই দেশগুলোতে প্রবেশে শেনজেন ভিসা প্রয়োজন (নরওয়ে, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, সুইডেন)।
ভ্রমণের পরিকল্পনা করার আগে গন্তব্য দেশের দূতাবাস বা VFS Global Bangladesh–এর সর্বশেষ তথ্য যাচাই করা উচিত।
অরোরা ভ্রমণ সস্তা নয়। বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট, হোটেল ও স্থানীয় ট্যুরসহ গড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা লাগতে পারে। স্থানীয়ভাবে এক রাতের অরোরা সাফারি ট্যুরের খরচ সাধারণত ১০০–২০০ ইউরো।
যারা একবার নিজের চোখে অরোরা দেখেছেন, তারা বলেন—এটি এমন এক অনুভূতি যা ভাষায় বোঝানো যায় না। আকাশজুড়ে আলোর ঢেউ যেন প্রকৃতির নীরব সিম্ফনি, যা চোখে পড়ে আবার হারিয়ে যায়—অপরূপ, অপার্থিব।